Artificial Intelligence

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: আগামী প্রজন্মের জন্য চ্যালেঞ্জ।

[vc_row][vc_column width=”1/4″][vc_single_image image=”847″ img_size=”300×400″ alignment=”center”][/vc_column][vc_column width=”3/4″][vc_column_text]

লেখাটি

প্রফেসর ডক্টর শামীম আহাম্মেদ,

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।

স্যার এর ফেইসবুক হতে সংগৃহীত

[/vc_column_text][/vc_column][vc_column][vc_separator color=”blue” border_width=”3″][/vc_column][/vc_row][vc_row][vc_column][vc_column_text]

গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (AI) প্রোগ্রাম “আলফাকোড”-এর (Alphacode) কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ সাফল্য দেখে রীতিমত চমকে উঠেছি, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর জগতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন প্লাটফর্ম কোডফোর্স-এ (Codeforces) অংশগ্রহণ করে “আলফাকোড” তেরো’শ রেটেড সমস্যার সমাধান করে প্রোগ্রাম লিখতে পারছে! কোডফোর্স-এ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করে সমস্যা সমাধান করার জন্য যেসব সমস্যা (Problem set) দেওয়া হয়, সেইসব সমস্যাগুলো কতটা কঠিন বা জটিল (Difficulty level), সেটা বোঝানোর জন্য সমস্যাগুলোকে এক ধরণের রেটিং (Rating) করে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।

খবরটা পড়ে চমকে উঠার যথেষ্ঠ কারণ আছে, কেননা প্রায় ত্রিশ বছরে পূর্বে এমএসসিতে থিসিসের সময় “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)” সম্পর্কে যে সামান্য ধারণা পেয়েছিলাম কিংবা পঁচিশ বছর পূর্বে বিভাগে “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স” কোর্সটি পড়াতে গিয়ে, AI সম্পর্কে যে ধারণা পেয়েছিলাম, সেই ধারণার সাথে আজকের AI-এর ধারণার বিস্তর বিস্তর ফারাক! আসলে সেইসময় হাতের কাছে তেমন কোনো বইপত্র ছিল না, ইন্টারনেটের তো প্রশ্নই আসে না, কেভিন নাইটের লেখা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence, Kevin Knight and Elaine Rich) বইটি আমাদের সবার কাছে ছিল সবেধন নীলমণির মতো। এরপরে নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুত আবির্ভাব মাইক্রোপ্রসেসরের গতিকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে যায়, কম্পিউটারের মেমরির ধারণক্ষমতা ও গতিকে উচ্চ থেকে উচ্চতর শিখরে নিয়ে যায়, ফলে তার সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে প্রতিনিয়ত AI-কে নতুন নতুন মাত্রায় সজ্ঞায়িত করা হচ্ছে, আর সেই সাথে আজ আগামী প্রজন্ম এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে!

“কম্পিউটার প্রোগ্রাম” হচ্ছে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য কম্পিউটারের ভাষায় লিখিত ধারাবাহিক কিছু নির্দেশনা! একজন মানুষ কোনো একটি সমস্যা যেভাবে সমাধান করে, সমস্যা সমাধানের সেই ধাপগুলোকে কম্পিউটারের ভাষায় লিখে, অর্থাৎ সেই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রোগ্রাম লিখে কম্পিউটারকে সরবরাহ করলে, কম্পিউটার সেই প্রোগ্রামকে সুবোধ বালকের মতো অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে ঐ ধরণের সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিষয়টা এইরকম, আমরা যেভাবে দুইটি সংখ্যার যোগফল নির্ণয় করতে পারি, যোগফল নির্ণয় করার সেই পদ্ধতির উপরে একটি প্রোগ্রাম লিখে কম্পিউটারকে শিখিয়ে দিলে, কম্পিউটার তখন যেকোনো দুইটি সংখ্যার যোগফল, আমাদের শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্ণয় করতে পারবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যোগফল নির্ণয় করার কোনো প্রোগ্রাম কম্পিউটারকে সরবরাহ না করলে, কম্পিউটার এতটাই নির্বোধ যে দুইটা সংখ্যার যোগফলও সে নির্ণয় করতে পারবে না! সুতরাং বলা যেতে পারে, কম্পিউটারের দৌড় আসলে মানুষের লেখা প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে। তবে সুবিধা হচ্ছে, আমরা এইসব যোগ-বিয়োগ বারবার করতে গেলে আমাদের ভুল হতে পারে, ক্লান্তি চলে আসতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে বেশি সময় দরকার হতে পারে, কিন্তু কম্পিউটারকে একবার কিছু নির্ভুলভাবে “প্রোগ্রাম” করে শিখিয়ে দিতে পারলে, কম্পিউটার সেই কাজ অনেক দ্রুত করতে পারবে, বারবার একই কাজ করতে গিয়ে ভুলও করবে না, আবার কম্পিউটারের কোনো ক্ষুধা বা ক্লান্তি নাই, রাগ-ক্ষোভ নাই, “ওভারটাইমের” সমস্যা নাই! রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যেকোনো অটোমেশনেও আসলে একটি প্রোগ্রাম দেওয়া থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, মানুষের লেখা একটা প্রোগ্রামের বাহিরে কোনো কিছু করার কোনো ক্ষমতাই আসলে কম্পিউটার বা রোবট বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত কোনো অটোমেশন সিস্টেমের নাই।

যাহোক, বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন নতুন প্রোগ্রাম লেখা শুরু হলো, গাণিতিক সমস্যার সমাধান, অনলাইনে কেনা-বেচা, ভিডিও দেখা, গান শোনা, গেম খেলা, গ্রাফিক্স থেকে শুরু করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্লেন চালনার জন্য জটিল প্রোগ্রাম লেখা হলো, সিটি স্ক্যান কিংবা এমআরআই মতো জটিল চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য প্রোগ্রাম লেখা হলো, স্বয়ংক্রিয় রোবটের জন্য প্রোগ্রাম লেখা হলো, আরও কতো কী! এইসব “প্রোগ্রাম” বা অন্যভাবে যাদেরকে “সফটওয়ার” বলে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাকে অনেক অনেক সহজ করে দিল।

একটা সাফল্য নতুন আরেকটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তাই একটা সময় মানুষ চিন্তা করতে শুরু করল, আচ্ছা, এমন কোনো “প্রোগ্রাম” লেখা যায় না, যে প্রোগ্রাম দিয়ে কম্পিউটার বা রোবট এমনভাবে কাজ করবে যেন দেখে মনে হবে, “এটা কোনো কম্পিউটার নয় বরং একজন মানুষ”, সেই প্রোগ্রাম অনুসরণ করে কম্পিউটার মানুষকে চিনতে পারবে, মানুষের মতো করে কথা বলতে পারবে, মানুষের কথার অর্থও বুঝতে পারবে, ফলে মানুষের সাথে স্বাভাবিক কথোপকথনও করতে পারবে, এমনকি মানুষের হাতের লেখাও পড়তে পারবে কিংবা মানুষের মতো টুকটাক কাজও করতে পারবে! যেই ভাবা, সেই কাজ! কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা কাজে নেমে পড়লেন! একসময় সেই ধরণের “কম্পিউটার প্রোগ্রাম” লেখা সফল হলো, এই ধরণের উন্নত মানের কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখতে পেরে মানুষ নিজেরাই নিজেদের মেধা, সৃজনশীলতা আর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে বলতে শুরু করল, “কম্পিউটারকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রদান করা হয়েছে, তোমরা দেখতে পাচ্ছ না, কম্পিউটারগুলো এখন মানুষের মতো আচার-ব্যবহার করতে শুরু করেছে”! বিশ্ববাসী AI-প্রোগ্রামগুলোকে দেখে সত্যি সত্যিই বিস্মিত হয়ে উঠল! আমার মনে আছে, ২০০৫ সালে জাপানে একটি রোবট আমার সাথে এমনভাবে কথা বলেছিল যে আমি প্রথমে বুঝতেই পারি নাই, এটা মানুষ নয়, এটা আসলে একটা রোবট! এইভাবে ধীরে ধীরে স্বপ্নলোকের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিগুলো আর কল্পকাহিনি হয়ে থাকল না, বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করল। মানুষ এক নতুন জগতে প্রবেশ করল! তবে “কম্পিউটার প্রোগ্রাম” লেখার মূল নিয়ন্ত্রণটা তখনও পর্যন্ত কিন্তু মানুষের হাতেই থাকল!

এই পর্যন্ত ভালোই ছিল! কিন্তু স্বপ্নবিলাসী মানুষ তাঁর নিজের স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যেতে চায়! বিপত্তিটা মনে হয় সেখান থেকেই শুরু! মানুষ ভাবতে শুরু করল, অনেক তো হলো, এবার আরও উন্নত কোনো প্রোগ্রাম লেখা যায় কী না, যে প্রোগ্রাম কম্পিউটারকে “চিন্তা” করতে শিখাবে! কী ভয়ংকর ধরণের স্বপ্ন! যেকোনো নতুন ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য কম্পিউটার নিজেই যেন “প্রোগ্রাম” লিখতে পারে! গুগলের AI-প্রোগ্রাম “আলফাকোড” সেই দুঃস্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ! “আলফাকোড” তেরো’শ রেটেড সমস্যার সমাধান করেছে, এই সমস্যাগুলো যদিও খুব জটিল ধরণের কোনো সমস্যা নয়, বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার সক্রিয় প্রোগ্রামারদের মধ্যে তেরো’শ রেটেড প্রোগ্রামারের সংখ্যা প্রায় সাতশ, কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে, “আলফাকোড” মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজেই প্রোগ্রাম লিখতে পারছে! যদিও “আলফাকোড” এখন পর্যন্ত মানুষের মতো “সম্পূর্ণ বিশ্লেষণী সক্ষমতা” অর্জন করতে পারে নাই, কিন্তু গুগলের AI-প্রোগ্রাম “আলফাকোড” নিশ্চয়ই এই জায়গাতে থেমে থাকবেনা, “আলফাকোড”কে দিনে দিনে আরও উন্নত করে “প্রোগ্রাম” করা হবে, মানুষের দেওয়া বুদ্ধিতেই একসময় “আলফাকোড” স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে, হয়ত সত্যি সত্যিই মানুষের মতো “সম্পূর্ণ বিশ্লেষণী সক্ষমতা” নিয়ে সে আবির্ভূত হবে, তখন যেকোনো নতুন ধরণের সমস্যার সমাধানের জন্য সে নিজেই নিজের জন্য প্রোগ্রাম লিখতে পারবে! মানুষের সাহায্য ছাড়া, কম্পিউটার যদি নিজেই নিজের মতো করে নিজের প্রয়োজনে প্রোগ্রাম লেখার সক্ষমতা অর্জন করে, তাহলে তো আগামী প্রজন্ম এক ভয়ানক ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে! এই কারণেই আমার মনে ভয়াবহ আশংকার যে প্রশ্নটা বারবার উঁকি দিচ্ছে, প্রোগ্রাম লিখে লিখে কম্পিউটারকে বুদ্ধি প্রদান বা নিয়ন্ত্রণ করার মানুষের দিন কী তাহলে শেষ হয়ে যাচ্ছে? কিংবা বলা যায়, “কম্পিউটার প্রোগ্রামার” হিসাবে মানুষের প্রয়োজন কী তাহলে “সীমিত” হয়ে যাচ্ছে? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন! এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আজ আগামী প্রজন্ম! আগামী প্রজন্মের মধ্যে, জটিল জটিল আর কঠিন কঠিন ধরণের সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা যারা অর্জন করতে পারবে, শুধুমাত্র তারাই AI-প্রোগ্রামের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকবে!

 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কে জানতে: চতুর্থ শিল্পবিপ্লবঃ আগামী প্রজন্মের জন্য চ্যালেঞ্জ।[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

https://bitbytestory.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*
*